৫ বছর ধরে পাগলীর জমানো টাকা বুঝিয়ে দিলেন ব্যবসায়ী
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী রাশি পাগলি প্রকৃত নাম গীতা রানি (৬৫)। বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে। স্বামী কানাই মন্ডলের মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঘুরে বেড়াতেন রাস্তায় রাস্তায়, রাতে আশ্রয় নিতেন একই উপজেলার ভেটখালী বাজারের কোনো এক দোকানের বারান্দায়। গীতার অসহায় অবস্থা দেখে কেউ তাকে খেতে দিতেন, কেউ দিতেন টাকা পয়সা। সেই টাকা তিনি বিশ্বাস করে জমিয়ে রাখতেন ভেটখালী বাজারের কসমেটিকস ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের কাছে। তবে তার টাকা জমানোর এই বিষয়টি কেউ জানত না।কিছুদিন আগে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন গীতা রানি। পরে বাজারের ব্যবসায়ীরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিছুটা সুস্থ হলে গীতার বাড়িতে যোগাযোগ করে সন্তানদের ডেকে এনে তাদের কাছে তুলে দেওয়া হয় গীতাকে।
সময় ভেটখালী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ জানান, গীতা তার কাছে গত পাঁচ বছর ধরে কিছু টাকা জমিয়েছে। তিনি সেগুলো তার সন্তানদের কাছে তুলে দিতে চান। পরে হিসাব করে দেখা যায়, আব্দুর রশিদের কাছে গীতার ১৮ হাজার টাকা জমা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর সবাই হতবাক। উপস্থিত সবাই আব্দুর রশিদের সততার প্রশংসা করেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ইমন হোসেন জানান, কসমেটিকস ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ খুব ভালো মনের মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। বাজারে একজন ধার্মিক, সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। তিনি সকলের কাছে বিশ্বাসী মানুষ। হিন্দু পাগলিও তাকে বিশ্বাস করে টাকাটা জমিয়েছেন।
আজমির কসমেটিকস এর মালিক ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘গীতা রানি আমার মায়ের মতো, তাকে আমি সব সময় সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। তিনি আমার কাছে প্রায় সময় এসে ১ টাকা ২ টাকার পয়সা জমা দিতেন। তিনি বলতেন, এগুলো তোমার কাছে জমা রাখ, আমার অসুখ হলে চিকিৎসা করাবা। পরে আমি তার জন্য একটি প্লাস্টিকের পাত্রের ব্যবস্থা করি যাতে তার টাকা আমার ব্যবসায় না ঢুকে যায়। সেই পাত্রে যখন পয়সা ভর্তি হয়ে যেত তখন আমি পয়সার পরিবর্তে টাকা রেখে দিতাম। মাঝে সে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে যায় আমরা বাজারের ব্যবসায়ীরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। বর্তমানে সে কিছুটা সুস্থ। মঙ্গলবার তার বাড়ি থেকে ছেলেকে ডেকে তার মায়ের জমানো আমানত তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। একই সাথে তার যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় সে বিষয়ে তার ছেলে বলা হয়েছে।
গীতা রানির ছেলে স্বপন কুমার মন্ডল বলেন, বাবার মৃত্যুর পর থেকে মা মানসিক ভারসাম্যহীন তাকে বাড়িতে রাখা যায় না। রশিদ কাকা ধার্মিক মানুষ সবাই তাকে খুব বিশ্বাস করে। আমার মা তার কাছে টাকা জমা রাখতেন তা কেউ জানত না। আমার মা কখনো কাউকে এ বিষয়ে বলেননি। তিনি আজ আমার কাছে টাকাটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। মায়ের জমানো এই ১৮ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা রাখব।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা বলেন, গীতা রানি আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা তার জন্য বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে। এছাড়া ছেলেদের সংসারে তার যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়ে আমি নিয়মিত খোঁজ খবর রাখব।