আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আন্দোলন কত প্রকার ও কি কি সেটা আপনাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। পালানোর দল আওয়ামী লীগ নয়- বিএনপি। বিএনপির আমলে মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি। এখন মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। বাঁশের লাঠিতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে রাস্তায় নামবেন তা হবে না। বরিশাল ও রংপুরে বস্তা বস্তা টাকা দিয়ে মানুষ নিয়ে গেছেন। দশ লাখ মানুষের কথা বলেন! অথচ সমাবেশে তো আপনাদের চেয়ার ফাঁকা থাকে। খেলার জন্য প্রস্তুত থাকেন। খেলা হবে, আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আজ সোমবার বিকেলে জেলা স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার মানুষের কষ্ট লাঘব করছে। গরিবের জন্য শেখ হাসিনার রাতে ঘুম নেই। বিএনপির সাধারণ মানুষের জন্য কোনো দয়া নেই। এদের দরকার ক্ষমতা। তাই জনগণকে সরকার পতনে উসকানি দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধ করতে আইন করেছিল জিয়াউর রহমান। খুনিদের যারা পুরষ্কৃত করেছিল বাংলার মাটিতে তাদের ক্ষমা নেই।
বঙ্গবন্ধুর খুনি ও গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের যারা বাঁচাতে চেয়েছে আগামী ১০ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে গেছেন যে তিনি রাজনীতি করবেন না। তারপরও তিনি লন্ডনে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে রাজনীতি চালাচ্ছেন। ডিসেম্বরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে খেলা হবে। বিএনপির দুঃশাসন এবং যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ১০ ডিসেম্বর খেলা হবে। যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের বাঁচাতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।
রাজপথেই বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। কারণ তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। অতীতের মতো তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে সহিংসতার পথে গেলে বিএনপিকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিসেম্বর মাসে খেলা হবে, মোকাবেলা হবে। নির্বাচনে হবে, আন্দোলনে হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে জনতার গর্জন শুনতে পাবে বিএনপি। ভোট চুরি, ভুয়া ভোটার তৈরি, ভোট জালিয়াতি, লুটপাট, দুর্নীতি ও নারী নির্যাতনকারী বিএনপির বিরুদ্ধে এবার খেলা হবে। বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আশা বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। পয়সা খেয়ে কমিটি করা লোকদের আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই। এসব কর্মকাণ্ড যারা করেন নিজেকে সংশোধন করে ভালো হয়ে যান। কমিটিকে ঘিরে পদ বাণিজ্যের কথা যেন না শুনি। ডেকে ডেকে পকেটের লোক বসাবেন তা চলবে না। এবার তদন্ত করে খোঁজ-খবর নেব। পয়সা খেয়ে কমিটি করা লোকদের আমাদের প্রয়োজন নেই। কমিটি একটা হবে। নতুন নেতা আসতে দেন। বসন্তের কোকিল আছে, দুঃসময়ের লোক নেই। কে কি করে তা শেখ হাসিনাও জানেন।
তিনি বলেন, হারানো ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির আন্দোলন চলছে। আসলে তারেকের হাওয়া ভবন ফিরে পেতে বিএনপির আন্দোলন চলছে। বিএনপি তারেক রহমানের রিমোর্ট কন্টোল। কোথায় তিনি, বাংলাদেশে আন্দোলনের নেতা কে। টেমস নদীর পাড় থেকে ডাক দেবে আন্দোলনের এটা বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে না। তারেকের অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলা হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন বলছেন। তিনি তো মুক্তই। তাকে নিয়ে তো আপনারা একটা মিছিলও করতে পারেননি। খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না, বেশিও বুঝবেন না।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সালাম গোলাপ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, ইকবাল হোসেন অপু ও আলহাজ সাঈদ খোকনসহ স্থানীয় এমপিরা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলরদের সমর্থনে পুনরায় একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।