কম আয়ের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) মসুর ডাল কিনে দেবে সরকার। পাশাপাশি কৃষিপণ্য উৎপাদনে সহায়তার জন্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার থেকে সার আমদানি করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ জন্য ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ টাকার কেনাকাটার অনুমোদন দিয়েছে। এই টাকা দিয়ে ৯০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের সার ও ২০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার চারটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।
বর্তমান সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি এটি দিয়ে প্রথম ক্রয় কার্যক্রম শুরু করেছে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বৈঠকে আটজন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সূচনা বক্তব্য দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে সভা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সার ও মসুর ডাল ক্রয়ের জন্য আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এটা অতিদ্রুত করতে হবে। কারণ সারের সরবরাহ আমরা কোনোভাবেই কমতে দেব না।
আর অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের মধ্যে মসুর ডাল খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সার ক্রয় ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মসুর ডাল ক্রয়। আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এর জন্য যা অর্থকড়ি লাগে সেটা ফরেন কারেন্সিতে হোক, আমরা দেব। এটা দ্রুতই করতে হবে।
’
অতীতে দেখেছি সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে অনেক কিছু কেনা হতো। আপনারা কি এটি অব্যাহত রাখবেন—সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আজ আলোচনা হয়নি।’ সারের সংকট হচ্ছে না, এমনটি কি বলা যায়—একজন সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা অতিদ্রুত সার কেনার তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছি।’
সভা সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১১তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার অনুমোদনক্রমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে তিন লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির ১১তম লটের মেয়াদ এরই মধ্যে উত্তীর্ণ হলেও পুনর্নির্ধারিত তারিখ আগামী ৬ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। আরব আমিরাতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১১তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে এক কোটি তিন লাখ ৩৫ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২১ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মূল্য ৩৪৪.৫০ মার্কিন ডলার।
কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো থেকে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি সই হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৩২.৭৫ মার্কিন ডলার হিসাবে মোট ব্যয় হবে ৯৯ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৭ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।