২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ নাংলা গ্রামের চিংড়ি ঘের মালিক আনারুল ইসলামকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাবেক সাংসদ, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক, সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান,কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানসহ ৫৪ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবারনিহতের ভাই রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে সাতক্ষীরার আমলী আদালত -৭ এর বিচারক মোঃ মহিদুল ইসলাম মামলাটি ১৫৬(৩)/১৫৭ ধারা মোতাবেক তদন্ত করে এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে মামলাটি একজন সহকারি পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তদন্তকারি কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
মামলার অন্যান্য প্রধান আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারক বিশ্বাস, বিভিন্ন থানায় কর্মরত পাঁচজন উপপরিদর্শক দুইজন সহকারি উপরিদর্শক, ২১ জন সিপাহী, নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ওরফে সাহেব আলীসহ আওয়ামী লীগের ১৯জন নেতা কর্মী ও দুই জন ভাড়াটিয়া কিলার।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক, তৎকালিন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ মহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানসহ ৫৪ জন দেবহাটা উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের আনারুল ইসলামের ঘেরে যান। খবর পেয়ে মামলার বাদি রবিউল ইসলাম বিষয়টি তার ভাই আনারুলকে অবহিত করলে সে ঘেরের ভেড়ি বরাবর দৌড়ে পালাতে থাকে। দৌড়ে ৪০০ গজ দূরে যাওয়ার পর আসামীরা তাকে ধরে ফেলে।
একপর্যায়ে উপপরিদর্শক জিয়াউল হক পিছন দিক থেকে তার বাম হাঁটুতে গুলি করে জখম করে। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারক বিশ্বাস তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে আনারুলের পেটের বাম দিকে গুলি করে। রক্তাক্ত আনারুলকে গাড়িতে তুলে আসামীরা তাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে আনারুলকে সাতক্ষীরা সদর হাপসাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রাত সাড়ে আটটার দিয়ে সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে আনারুলের লাশ তার প্রতিবেশী চাচা আবু সাঈদ গাজীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে তাকে পরিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আসামীরা ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মৃত আনারুল ইসলামকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করিয়া ১৪ জানুয়ারি রাতেই পুলিশ বাদি হয়ে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে দেবহাটা থানায় ১২ নং মামলা দায়ের করেন। তবে মৃত আনারুল ইসলাম এর পেটের বাম পাশে আসামী তারক বিশ্বাসের পিস্তল দ্বারা গুলি করার বিষয়টি সুরতহাল রিপোর্ট ও পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে অজ্ঞাত কারণে উল্লেখ করা হয় নাই বলে মামলার আর্জিতে লেখা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. হাফিজুর রহমান।