বাংলাদেশে পাইকারি কাপড়ের বৃহৎ আড়ত হিসেবে পরিচিত রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজারের ৮টি মার্কেটের অন্তত ৫ হাজার দোকান ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
দোকানগুলোতে ৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যের মালামাল ছিল বলে জানিয়েছেন তারা। সহায়-সম্বল হারানোর পাশাপাশি অনেকে বিভিন্ন ব্যাংকে বড় অংকের ঋণ রয়েছে বলেও জানান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, পবিত্র রমজানের ঈদ ঘিরে ব্যবসায়ীরা দোকানে নতুন মালামাল তুলে পূর্ণ প্রস্তুতি নেন। কিন্তু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড তাদের পথে বসিয়ে দিল। পুড়ে যাওয়া মার্কেটগুলোতে প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রি পিস ও শাড়ির দোকান ছিল। পাঁচ হাজার ব্যবসায়ীর অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা।
পুড়ে যাওয়া মার্কেটগুলো হলো- বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, এনেক্সকো মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বরিশাল প্লাজা ও মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেট।
এসব মার্কেটের মধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও মহানগর কমপ্লেক্সটি সম্পূর্ণরূপে কার্ড দিয়ে তৈরি। ওই মার্কেট পাঁচটির সব দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। তাছাড়া এনেক্সকো ভবনের তিন, চার, পাঁচ, ছয় ও সাততলার অধিকাংশ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া ইসলামিয়া মার্কেট ও বরিশাল প্লাজা মার্কেটের কয়েকটি ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এনেক্সকো মার্কেটের আবু সাঈদ নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন আগে মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি দোকান দেন তিনি। ঈদ মৌসুমে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ৫ লাখ টাকা ঋণ করে ব্যবসা শুরু করেন। স্বপ্ন ছিল, এই ব্যবসা দিয়েই ঋণের টাকা পরিশোধ করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল তার সব পরিকল্পনা। এ সময় হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সাইফুল নামের একজন ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, মহানগর কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় আমার একটি প্যান্টের দোকান রয়েছে। রমজানের ঈদ মৌসুমকে ঘিরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ঋণ করে মালামাল উঠিয়ে ছিলাম। এখন সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এক টাকার মাল উদ্ধার করতে পারিনি। এখন আমি চিরতরে পথে বসে গেলাম বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আশেপাশের সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন সংস্থা অগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করছে। ব্যবসায়ীরা আশেপাশের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো থেকে নিজেদের কিছু মালামাল সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। আবার পুড়ে যাওয়া স্তূপের মধ্যে ব্যবসায়ীরা কিছু মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। আশপাশের উৎসুক জনতার ভিড়ে কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। মাইক দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।