বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর মহাপরিচালকের নিকট লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সাতক্ষীরার জেলা মৎস্য অফিসার মো. আনিছুর রহমানের বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
ঠিকাদার মো. শহিদুল ইসলাম (শহিদ) বলেন, সাতক্ষীরা মৎস্য অধিদপ্তরে কয়েক বছর ঠিকাদারীর কাজ সুনামের সঙ্গে করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তি ও অফিসারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে কাজ বাস্তবায়ন করে। কাজ করতে গিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তা সম্পর্কে বিভিন্ন কটূক্তিমূলক কথা শোনা যায়। যা কাজ করতে গেলে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারি। বিশেষ করে মো. জেলা মৎস্য অফিসার আনিছুর রহমানের বিষয়ে একটু বেশিই শোনা যায়। তার কিছু খারাপ কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করেন।
প্রথমেই বলা যায় যে, জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে উনি ঠিক মতো অফিস করেন না এবং উনার অধীনস্থ উপজেলা অফিসের অফিসার ও কর্মচারীবৃন্দও সঠিক ভাবে অফিস করেন না। বিশেষ করে কলারোয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার একজন। এজন্য মৎস্য চাষিরা তাদের কাংক্ষিত সেবা পাচ্ছে না এবং মৎস্য অধিদপ্তরের চেইন অব কমান্ড বজায় থাকছে না। উপজেলা অফিসারগণ সঠিক ভাবে অফিস না করে মো. আনিছুর রহমানকে টাকা দিলেই হয় অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে অফিস না করেও কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ নিয়মিত বেতন ভাতাদি উত্তোলন করছে। যা সরকারী অর্থ অপচয় হচ্ছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। বিশেষ করে তালা ও কলারোয়ার অফিসের অবস্থা বেহাল দশা।
এ দুটি উপজেলাসহ সব উপজেলায় তিনি কোন ধরনের তদারকি করেন না। তিনি যদিও যেদিন অফিস করেন সেদিন অফিসের কাজ বাদ দিয়ে চিংড়ি চাষ প্রদর্শনী খামার, এল্লারচর গিয়ে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডাবাজি করেন। এছাড়াও নিজ দপ্তর অর্থাৎ জেলা মৎস্য দপ্তর, সাতক্ষীরা সঠিক ভাবে সংস্কার কাজ না করিয়ে সরবরাহকারী বা কোটেশন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে কোন রকম দায়-সারা কাজ শেষ করেন।
এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে উপজেলা মৎস্য অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে মাছ চাষি ও খামারীদের নিকট থেকে বিভিন্ন সময় চাঁদা উত্তোলন করেন পাশাপাশি সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্টের আওতায় প্রতিটি উপজেলায় খাল খনন করা হয়। খাল খনন করতে গিয়ে মো. আনিছুর রহমান প্রতিটি খালের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট হতে খাল প্রতি ১.৫ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করেন অর্থাৎ ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে সঠিক ভাবে খাল খনন না করে টাকা আত্মসাৎ করেন। পাশাপাশি খাল খননকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট হতেও চাঁদা দাবি করেন এবং খনন কাজে ব্যাপক অনিয়ম করেন। খাল খননকালে তিনি কোন ধরনের তদারকি করেন না। এতে সঠিক ভাবে খাল খনন হয়নি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কলারোয়া উপজেলার একড়া, নারায়ণপুর ও যুগিখালি ক্লাস্টার।
উর্ধ্বতন বিভিন্ন অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে চাকুরী দেয়ার কথা বলে চাকুরী প্রত্যাশিদের নিকট হতে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করেন। এজন্য তার কিছু এজেন্ট ইতোমধ্যে সাতক্ষীরায় তৈরী হয়েছে। এই সব মুখ-চাঁদা ও অবৈধ অর্থ দিয়ে তিনি ইতোমধ্যে ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকায় জমি ক্রয় করে বহুতল অট্টালিকা নির্মাণ করছেন। খুলনা জেলার সোনডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ৪০ লাখ টাকায় একটি প্লট ক্রয় করেন এবং ঢাকাতেও তার একটি প্লট বুকিং দেয়া আছে আর এসব তথ্য তিনি তার আয়কর ফাইলে প্রদান করেন নি। তার একমাত্র কারণ উক্ত অর্থ গুলো তিনি সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে উপার্জন করেন।
এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলায় যত মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে, সে তাদের মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপস, ইমো, ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন আপত্তিকর কথাবার্তা বলে, ম্যাসেজ প্রদান করে এবং অশ্লীল অডিও-ভিডিও প্রেরণ করে। যা একজন অফিসার হিসেবে খুবই গর্হিত কাজ। তিনি সব থেকে বেশি শ্যামনগর উপজেলায় যাতায়াত করেন, নামে মাত্র বলেন মাঠ তদারকিতে যাচ্ছেন কিন্তু বাস্তবতা হল ভিন্ন। শ্যামনগর উপজেলায় তিনি বিভিন্ন রিসোর্টে নারী নিয়ে আমোদ-প্রমোদ ও দৈহিক সম্পক স্থাপন করে থাকেন।
ইতোপূর্বে তিনি যখন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে যশোর জেলায় কর্মরত ছিলেন তখন ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ প্রজেক্ট (এনএটিপি-২) প্রকল্পের পরিচালক এস.এম. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে সু-সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তার নাম ভাঙ্গিয়ে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তর হতে বিভিন্ন সময় চাঁদা উত্তোলন করতেন। এনএটিপি-২ প্রকল্পের এগ্রিকালচারাল ইনোভেশন ফান্ডের (এআইএফ-২,৩) আওতায় অনুদান দেয়ার নাম করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও সিআইজি সদস্যদের নিকট হতে টাকা দাবি করতেন। ক্ষুদ্র উদোক্তা বা সিআইজি সদস্যরা টাকা দিলে তাদের উপ-প্রকল্পের প্রস্তাব ঢাকায় প্রেরণ করতেন এবং এনএটিপি-২ প্রকল্প পরিচালক তার বন্ধুর নিকট হতে পাশ করিয়ে নিতেন। পাশ করানোর পর কেনাকাটাতেও তিনি মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা সরবরাহকারীর নিকট হতে নিতেন। মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনী বাস্তবায়নে তার ছিল ব্যাপক অনিয়ম। প্রতিটি প্রদর্শনীর জন্য তিনি ৩-৫ হাজার টাকা দাবি করতেন। যশোর থাকাকালীন এনএটিপি-২ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জিনিয়া করিম তৃপ্তি, মুনিয়া খাতুন, ও প্রিয়াংকা ফেরদৌস এবং ক্ষেত্র সহকারী জান্নাতুল ফেরদৌসকে কু-প্রস্তাব দিতেন এবং রিসোর্টে রাত্রিযাপন করার প্রস্তাবও দিয়েছেন লোক মুখে শোনা যায়। সম্প্রসারণ কর্মকর্তা লিপি পালকে নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার অর্থাৎ মাঝে মাঝেই মৎস্য অধিদপ্তরের কোটচাঁদপুর খামার ও বাঁওড়ে যান এবং তার সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মেলামেশা, নৌকা ভ্রমণ ও আমোদ-প্রমোদ করেন। চাকুরী দিবে বলে অনেকের নিকট হতে টাকা নিয়ে তা আত্মত্মসাৎ করেন। তিনি যশোরেও নিয়মিত মদ্যপান করতেন। এ নিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতিসহ নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে মোবাইল ফোনে ফোন দিলে তিনি জানান আমার বিরুদ্ধে একটি গ্রুপ চক্রান্ত করছে।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতিসহ নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান আমি এখনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দারের মোবাইল ফোনে ফোন করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীরকেও একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সচেতন মহল জোর দাবি জানিয়েছেন।