২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাতক্ষীরার শহরের কামাননগরের একটি ছাত্রবাসে ঢুকে আমিনুর রহমানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের তৎকালিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ও সদর থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইনামুল হকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজউদ্দিন সরদারের ছেলে নিহত আমিনুর রহমানের ভাই সিরাজুল ইসলাম(৫৪) বাদি হয়ে সোমবার সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল বাদির লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে (১৫৬(৩) ধারা মতে) এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে একজন সহকারি পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলার তদন্ত করানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইনামুল হকসহ সদর থানার চারজন উপপরিদর্শক, একজন সহকারি উপপরিদর্শক, ছয়জন সিপাহী গোয়েন্দা পুলিশের তিনজন উপপরিদর্শক, আট জন সিপাহী ও কামাননগরের তিন ব্যক্তি।
মামলার বিবরনে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজউদ্দিন সরদারের ছেলে আমিনুর রহমান ২০১৪ সালে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স শেষ করে সাতক্ষীরা শহরের কামাননগর কবরস্থানের পাশে জনৈক মুকুল হোসেনের বাড়িতে একটি ছাত্রাবাসে থাকতো। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ভাত খাওয়া চলাকালিন তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। ছাত্রাবাসে ঢুকে পুলিশ ছাত্রাবাসের আটজন সদস্যকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। সদর থানার উপপরিদর্শক আবুল কাশেম ছাত্রাবাসে থাকা আমিনুর রহমানের পিঠের বাম দিকে গুলি করে। আমিনুর মেঝেতে পড়ে গেলে তার পায়েও গুলি করা হয়। একপর্য়ায়ে অধিক রক্তক্ষরণে আমিনুর মারা হয়। এ সময় ছাত্রাবাসে থাকা কয়েকজন গুলিতে জখম হন। তাদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও পরে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার তারিখে রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে নিহত আমিনুরসহ কয়েকজন জখমীর নামে সদর থানায় জিআর-৩২৮/১৪ ও ৩২৯/১৪ নং মামলা দায়ের করা হয়। ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলার বিলম্বের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. বাসারাতুল্লাহ আওরঙ্গীসহ পাঁচজন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. তোজামম্মেল হোসেন তোজাম ২৫ পুলিশ সদস্যসহ ২৮জনের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।