সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আবাদচন্ডিপুর চুনা গ্রামে মাত্র ত্রিশ হাজার টাকায় গাছ কেটে সামাজিক বনায়ন ধ্বংসের চুক্তি করলেন ৪ জন। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের কাজ করার নামে নির্বিচারে গাছ ধ্বংসের মহড়া চালানো হচ্ছে। একদিন কাজের বিপরীতে প্রায় তিন থেকে চার’শত গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে তাতে কাজটি সম্পূর্ণ হতে দুই থেকে তিন হাজার গাছ কাটতে হবে বলে ধারণা করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন প্রবীণ ব্যক্তি। গাছ কাটার ব্যাপারে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের নিকট জানতে চাইলে তারা সাবলীল ভঙ্গিতে বলেন, আমরা একটা গাছ কাটিনি। আমাদের গাছ কাটতে হবে না এই শর্তে স্থানীয় কয়েকজন আমাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। তারাই গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা কাজ করতে আসছি কেন ঝামেলায় যাব। গাছ কাটার জন্য কারা টাকা নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সাব ঠিকাদার সাঈদ বলেন, স্থানীয় কয়েকজন টাকা নিয়েছে। আমি তাদেরকে চিনি না। আমার এখানের সহযোগী রাজুর মাধ্যমে আমি টাকা দিয়েছি। বিষয়টি রাজুর কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, চুনা গ্রামের মৃত কালাচাঁদ গাজীর ছেলে বাক্কার গাজী (কানা বাক্কার) কুদ্দুস গাজী,মৃত কাশেম গাজীর ছেলে শহীদ গাজী ও মৃত লতিফ গাজীর ছেলে আজিজুল হককে গাছ কেটে দেয়ার শর্তে টাকা দিয়েছি। আর তাদের লিডার কানা বাক্কারের হাতে আমি টাকাটা দিয়েছি। গাছ কাটার বিপরীতে টাকা নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বাক্কার গাজী বলেন, হ্যাঁ ঠিকাদারেরা মসজিদে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। আর গাছগুলো আমি তাদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি মসজিদ ফান্ডের উন্নয়নের জন্য। আজিজুল হক বলেন, টাকার একটা কথা উঠেছিল কিন্তু দিয়েছে কিনা আমি জানিনা। আমিও চাই গাছ কাটা বন্ধ হোক। এই গাছ আমাদের মায়ের মত আগলে রাখে।
কুদ্দুস গাজী টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মসজিদের জন্য ৩০ হাজার টাকা নিয়েছি। ভেকু মেশিনে গাছগুলো ভেঙে দিচ্ছে সেই গাছগুলো আমরা সংরক্ষণ করে মসজিদে নিয়ে যাচ্ছি এগুলো মসজিদের স্বার্থে ব্যবহার হবে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, কাজ হবে এটা আমি জানি। কিন্তু ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ আমাকে না জানিয়ে কাজ শুরু করেছে। ওখানে কি হচ্ছে এটা আমার জানার বাইরে। তবে আমি বিষয়টা দেখবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (এস ও) জাকারিয়া ফেরদৌসের সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, আমি বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পাঠিয়েছি যদি গাছ কাটা বন্ধ না করে তাহলে তাকে ধরে জেলে পাঠাবো।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চুনার বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আজিজুল হকের বাড়ি থেকে আশ্রয়ন প্রকল্প পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়। রাস্তার পাশে থাকা কয়েক হাজার গাছ নিধন করতে রাতারাতি স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ শুরু করে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। কয়েকজনকে মোটা অংকের টাকা ও সর্বসাধারণের জন্য মসজিদে ইফতার পার্টির আয়োজন করে। চুক্তির টাকা পরিশোধ করে ফুরফুরে মেজাজে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ মানছেন না সরকারি নির্দেশনা।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর সরকারি ভাবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে আগেই। নিষেধাজ্ঞা আদেশ টি কঠোরভাবে পালনের উদ্দেশ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। গাছ সংরক্ষণ ও নতুন গাছ রোপনের ক্ষেত্রে সরকার যখন কঠোর ভূমিকায় অবস্থান করছে ঠিক তখনই একদল বন খাদক টাকার বিনিময়ে বনায়ন ধ্বংসের ইজারা নিয়েছে। এ সমস্ত অর্থলোভীদের বিরুদ্ধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা সুধী সমাজের।