দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ যাত্রীদের ভ্রমণের সময় মেট্রোরেলের নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সকল যাত্রীর কাছে আমার অনুরোধ ভ্রমণের সময় মেট্রো রেলের নিয়ম ও নির্দেশিকা মেনে চলুন, এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি ভিত্তিক ট্রেন। সুতরাং, প্রত্যেকেরই এটি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত।”
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মেট্রোরেল প্রসঙ্গে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি যাত্রীদের মেট্রো রেল পরিষ্কার রাখতে এবং এখানে-ওখানে কোনও আবর্জনা না ফেলতে, বরং প্রত্যেককে ট্রেনে বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এই মেট্রো রেল ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি চলতেই থাকবে। সুতরাং, নিয়ম এবং নির্দেশিকা অনুসরণ করে এটি ব্যবহার করুন। প্রত্যেকেরই এটি ব্যবহারের সময় মনে রাখা উচিত।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে বিশেষ করে সংসদ ভবন এলাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে সে বিষয়েও জানান।
তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সরকার নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
তিনি বলেন, “আমরা যে কোনো কাজে (উন্নয়ন প্রকল্প) যাওয়ার সময় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সেই সমস্ত প্রকল্পগুলি সম্পন্ন করেছি।”
মেট্রোরেল প্রকল্প সম্পর্কে সরকার প্রধান বলেন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রাথমিকভাবে বিজয় সরণির মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল রুট তৈরি করা হয়েছিল যেখানে আমার ঘোর আপত্তি ছিল।
“তা হলে আমাদের তেজগাঁও বিমানবন্দর বন্ধ করে দিতে হবে যেটির ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে। একটা তৈরী করা এয়ারপোর্ট সেটা কখনো নষ্ট হোক আমি চাইনি,” তিনি স্মরণ করেন।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ১৯৯৮ সালের বন্যায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর বন্যার পানিতে চলে যাওয়ায় সব ত্রাণসামগ্রী এই বিমানবন্দর দিয়ে এসেছিল। তাছাড়া, এখানে ঘন কুয়াশায় কখনো কখনো বিমান চলাচল ব্যবহৃত হয়, গতকালও সাতটি প্লেন কোলকাতায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তেজগাঁও বিমানবন্দরটা কখনো বন্যা কবলিত হয় না এবং এখানে কায়াশার পরিমানটাও খুব কম। কিন্তু এই এয়ারপোর্টাকে বন্ধ করে দিয়ে এখানে হাউজিং নির্মাণের প্রস্তাবও আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণীরা দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন যে সরকার যখন প্ল্যানেটোরিয়ামের জন্য ডিজাইন করেছিল, তখন এর গম্বুজটা অনেক উপরে করার কথা ছিল।
তিনি যোগ করেছেন “আমরা সেই উচ্চতা কমিয়েছি। যদি উচ্চতা ৬০-৭০ ফুট অতিক্রম করে তবে এটি (তেজগাঁও বিমানবন্দরের) এয়ার ফানেলে পড়ে যাবে। বিমান ওঠানামার জায়গাটা কিন্তু রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, যদি পুরানো অ্যালাইনমেন্ট কার্যকর করা হয় তবে সরকারকে ২২টি ভবন ভেঙে ফেলতে হোত এবং সে কারণেই “আমি খামার বাড়ি এলাকা ব্যবহার করে নতুন রুট প্রস্তাব করেছি। যদিও আমাদের আঁতেল শ্রেনীর তীব্র আপত্তি ছিল সংসদ ভবন নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে, খেজুর বাগান নষ্ট হবে। তছাড়া, এই খেজুর বাগান আমাদেরই লাগানো ছিল।
তিনি বলেন, লুই কানের ডিজাইন নিয়ে এসে সে সময় তিনি দেখলেন সংসদ ভবনের পাশে যে দুটি মাঠ রয়েছে তার জায়গা এই ডিজিাইনে পড়েনা। তাছাড়া এই বাগানও নষ্ট হবে না।
তিনি আরও বলেন, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল রুট সম্প্রসারণ করেছেন।
“সেই সময়, মেট্রোরেলের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনটি তার বাঁক এবং অবতরণের জায়গার জন্য ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল,” তিনি যোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছিলেন যে এত বড় স্টেশন ভেঙে আরেকটি নির্মাণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
“আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, স্টেশনটিকে অক্ষত রেখে আমরা কীভাবে এটি করতে পারি, প্রয়োজনে মেট্রো রেল স্টেশনের উপর দিয়ে যাবে বা তার বাঁক নেওয়ার জন্য অন্য জায়গা খুঁজে নেবে। এখন, এটি সেইভাবে বাস্তবায়ন করছে,’’ বলেন তিনি ।
শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ নষ্ট করবে বলে শিক্ষার্থীরা বাধা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি যে মেট্রো রেলের কারণে তারা কোন ঝামেলার সম্মুখীন হবে না, কারণ এটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি কোণ দিয়ে যাবে যার কোন শব্দ থাকবে না, স্বয়ংক্রীয় ভাবে চলবে।’
হলি আর্টিজান (বেকারী) আক্রমণের পরে এটির কাজ বন্ধ করা হয়েছিল যেখানে এই প্রকল্পের সাথে জড়িত সাত জাপানি পরামর্শক নিহত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সময়ে সমস্ত জাপানিরা তাদের স্বদেশে ফিরে গিয়েছিল এবং তিনি নিজে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছে তাঁর সমবেদনা প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর জাপান সফরে সাতজন নিহত জাপানি কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেছিলেন। তাদের সান্ত¦না দেয়ার পাশাপাশি যা যা করণীয় তাঁর সরকার তা করেছে এবং এরই প্রেক্ষিতে জাপান সরকার তাঁর অনুরোধ বিবেচনায় নেয়।
তিনি স্মরণ করেন যে এটি আবার কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ‘কিন্তু সেই সময় ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করে আমাদের প্রকৌশলীরা সঙ্গে মিলে কাজটি ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গেছে,’ তিনি যোগ করেন।
পদ্মা সেতু নিয়েও নানা ঢালাও সমালোচনা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সেতুতে কে উঠবে আর কোথা থেকে এর টাকা উঠবে যারা বলেছিল তাদের বলতে চাই ইতোমধ্যে কয়েকমাসের মধ্যে ৪শ’ কোটি টাকা উঠে গেছে। আসলে প্রত্যেকটা কাজে বাধা দেওয়াটা আমাদের কিছু মানুষের চরিত্র।
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মত এমন একজন ব্যক্তিত্বকে আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তিনি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি মেট্রোরেল বাস্তবায়নে জাপান সরকার, মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় জনগণকেও ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, আজকে তিনি মানুষের মাঝে বিপুল উৎসাহ ও উচ্ছাস দেখছেন এই মেট্রো রেল নিয়ে।