বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে (৫ মে) বৃহস্পতিবার সকালে ১১ টায় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ও সুন্দরবন প্রেসক্লাব সংলগ্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স-এর আয়োজনে “টেকসই বেড়িবাঁধ ও সুপেয় পানির দাবিতে” এক মানববন্ধন ও পরিবেশ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, লিডার্সের সুবিধাভোগী নারী-পুরুষ (মনের মানুষ), স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও লিডার্স কর্মকর্তাবৃন্দ। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সভাপতি বিলাল হোসেন।
“ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই”
লিডার্সের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোসাঃ লায়লা খাতুন উপস্থিত সবাইকে লিডার্সের পক্ষ হতে শুভেচ্ছা জানিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তিনি বলেন, “উপকূলবাসীর চাহিদা ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ।” বর্তমান বাঁধ গুলো অনেক ক্ষেত্রেই কাঁচা ও অস্থায়ী, যা এক মৌসুমেই ধসে পড়ে। ফলে উপকূলবাসী বারবার বিপন্ন হয়ে পড়ে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যেন দ্রুত এই এলাকায় পরিবেশবান্ধব, দীর্ঘস্থায়ী ও জলবায়ু-সহিষ্ণু বাঁধ নির্মাণের যেন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
মানববন্ধনে লিডার্সের সুষমা জলবায়ু সহসশীল দলের সদস্য মিনতি সরকার বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল সমস্যা। টেকসই বেড়িবাঁধের অভাব ও সুপেয় পানির সংকট সমাধানে সরকারের জরুরি হক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
উপস্থিত বক্তারা বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই প্রায় চিরস্থায়ী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নিয়মিত বন্যায় প্রতি বছর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, পশুসম্পদ ও জীবিকার উপকরণ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানকার বাঁধগুলো টেকসইভাবে নির্মিত হচ্ছে না।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া উপকূলীয় নারী প্রিয়া কাহার জানান, সুপেয় পানির অভাবে তারা নিত্যদিন অসহনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। দূরবর্তী এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের সময়, শ্রম ও স্বাস্থ্য সবই ব্যয় হচ্ছে। অনেক নারী স্ত্রী রোগসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে ভুগছেন।
স্থানীয় সাংবাদিক ওসমান গনি সোহাগ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দিন দিন হুঁমকির দিকে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষ কর্মের জন্য বাইরে চলে যাচ্ছে। নারীরা বহু কষ্টে পরিবারের দায়িত্ব নিচ্ছে। এখানে লবনাক্ততা ও প্লাস্টিক নামক দানব আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তিনি আরো বলেন এভাবে চলতে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য আরো ঝুঁকির মুখে পড়বে। তিনি স্থানীয় মানুষকে অনুরোধ করেন অল্প লাভের আশায় যেন সুন্দরবনকে যেন ধ্বংস না করা হয়।
সবশেষে সুন্দরবন প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিলাল হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, বন উজাড়, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র আজ হুমকির মুখে। তিনি আরো বলেন আমাদের উপকূলের মানুষের জীবনে টেকসই বেড়িবাঁধ ও সুপেয় পানি দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। তিনি উপস্থিত সবাইকে আহ্বান করেন দিনে দিনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।