বাঙালির গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে সাতক্ষীরা, শ্যামনগর উপজেলার প্রকৃতির রানী সুন্দরবনের কোলঘেঁষা বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী খোলপেটুয়া নদীর দুই তীরে মানুষের ঢল নেমেছে। বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, মুন্সীগঞ্জ, পাতাখালী নওয়াবেকী, সহ নদীর দুপাড়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষের যেন মিলন মেলায় রূপ নিয়েছে নৌকা বাইচের এই অনুষ্ঠানে। কয়েকদিন আগে থেকে প্রচার-প্রসার চালানোর কারণে গ্রামের মানুষ ছাড়াও শহরের থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমায় খোলপেটুয়া নদীতে।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল জুড়ে আনন্দ উপভোগ করেছেন দুই পাড়ের মানুষ। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে, আবার নদীতে নৌকা ও ট্রলারে ঘুরে ঘুরে নৌকা বাইচ উপভোগ করেছেন হাজার হাজার মানুষ।
এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার উপলক্ষে আশেপাশে অনেক গ্রাম অঞ্চলের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিকাল ৪ টার সময় নীলডুমুর উওর পাড়া যুব উন্নয়ন সংঘ কমিটির উদ্যোগে নৌকা বাইচের আয়োজন করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খোলপেটুয়া নদীতে যুগ যুগ ধরে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা চলে আসছে। প্রতি বছর এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে কিন্তু করোনার কারণে বন্ধ ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরেও নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় ৫টি নৌকা অংশগ্রহণ করে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এস,এম, জগলুল হায়দার মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য -১০৮, সাতক্ষীরা -০৪।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অধিনায়ক লেঃ কর্নেল কামরুল আহাসান (এস জিপি)(পি-আই এনজি)ইঞ্জিনিয়ার্স, নীলডুমুর ১৭বিজিবি। এ,কে,এম, ইকবাল হোসাইন, সহকারী বন সংরক্ষক, পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা। জি,এম, আকবর কবির শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, মোঃ ফারুক হোসেন, তরুণ সমাজসেবক বুড়িগোয়ালিনী।
সার্বিক সহযোগিতা ও পরিচালনায়, ৯নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন আওয়ামী ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দে। পরিচালনা করেন, জি,এম জাকির হোসেন (সোহাগ), জি, এম আকবর হোসেন বুড়িগোয়ালিনী।
প্রতিযোগিতায় গাবুরা, আশাশুনি, পুইজালা, কয়রা, সহ অনেক নৌকা অংশগ্রহণ করেন। চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলামের ঘাট থেকে শুরু হয়ে জাপান প্রজেক্টের সংলগ্ন ঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে গাবুরা হিরার তরি নৌকা, দ্বিতীয় হয়েছে কয়রা সোনার তরি নৌকা এবং তৃতীয় হয়েছে পুইজালা নৌকা। প্রথম বিজয়ী নৌকাকে একটি ফ্রিজ সমপরিমাণ প্রাইজ মানি দ্বিতীয় বিজয়ী নৌকাকে মনিটর সমপরিমাণ প্রাইজ মানি এবং তৃতীয় বিজয়ী নৌকার মালিককে পুরষ্কার দেওয়া হয়।
পুরষ্কার বিতরণ করেন, নৌকা বাইচ উদযাপন কমিটির আহবায়ক, ফারুক হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন বুড়িগোয়ালিনী নৌ থানা। সাবেক, চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল, এ,বি, সিদ্দিক, শহীদুল, রবিউল, হারুন,
সহ অনেকে।
এদিকে নদীর দুপাড়ে বুড়িগোয়ালিনী ও গাবুরা হাজার হাজার দর্শক প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনে খুশি দুইপাড়ের নানা বয়সী মানুষ। নৌকা বাইচের পাশাপাশি গ্রামীণ সকল খেলাধুলা আয়োজনের দাবি করেছেন আগত দর্শনার্থীদের অনেকেই।
নৌকা বাইচ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ফারুক হোসেন বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা বুড়িগোয়ালিনী গ্রামে কয়েক বছর পর থেকে আবার শুরু করা হলো। তরুণ যুবকরা ফেসবুক, ইউটিউব, মোবাইল গেম, সংস্কৃতি সহ নানা কারনে বর্তমান সময়ে ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধুলা বিলুপ্তির পথে। তরুন সমাজ সহ মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও সুস্থ্য বিনোদন দিতে আমাদের এই আয়োজন। আশা করি আগামী বছর থেকে বৃহৎ পরিসরে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হবে।