অসংখ্য আক্রমণ করেও প্রথমার্ধে ভয়চেখ স্ট্যাসনির দেয়াল ভাঙতে পারল না আর্জেন্টিনার তারকাসমৃদ্ধ আক্রমণভাগ। পেনাল্টি মিস করে সবচেয়ে বড় হতাশার জন্ম দিলেন অধিনায়ক নিজেই। তবে এই আর্জেন্টিনা তো ভেঙে পড়ার দল নয়। প্রমাণ মিলল দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই। আলেক্সিস মাক আলিস্তের গোলে মিলল দিশা। হুলিয়ান আলভারেসের গোলে লাগাম এলো হাতে। সব শঙ্কা দূর করে নকআউটে পর্বে পা রাখল লিওনেল স্কালোনির দল।
দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ‘সি’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে লিওনেল স্কালোনির দল। শুধু শেষ ষোলোর টিকেটিই নয়, দারুণ এই জয়ে গ্রুপ সেরাও হয়েছে আর্জেন্টিনা।
তিন ম্যাচে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট আর্জেন্টিনার। শেষ ষোলোয় তাদের প্রতিপক্ষ ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআপ অস্ট্রেলিয়া।
টেবিলের শীর্ষে থেকে শেষ রাউন্ডে খেলতে নামা পোল্যান্ড ছিটকে পড়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল। তবে একই সময়ে শুরু অন্য ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে বড় জয়ের আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত মেক্সিকো ২-১ গোলে জয় পায়। ফলে তাদের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে এগিয়ে পরের ধাপে ওঠে ইউরোপের দলটি।
গোল চাই, যেকোনো মূল্যে-সেই চেষ্টায় শুরু থেকেই নেমে পড়ে আর্জেন্টিনা। সপ্তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে চেষ্টা করেন মেসি, তবে তার পায়ের শটে তেমন জোর ছিল না, অনায়াসে ঠেকান গোলরক্ষক।
তিন মিনিট পর ভয়চেখ স্ট্যাসনির কঠিন পরীক্ষা নেন মেসি। দুরূহ কোণ থেকে তার শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান পোলিশ গোলরক্ষক। ষোড়শ মিনিটে মেসির পাস ডি-বক্সে পেয়ে প্রতিপক্ষের একজনের বাধা এড়িয়ে উড়িয়ে মারেন মার্কোস আকুনিয়া।
মূলত রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণের কৌশল নেয় পোল্যান্ড। প্রথম ৩০ মিনিটে তারা তেমন কোনো আক্রমণ করতে না পারলেও ঘর সামলে রাখায় সফল।
২৮তম মিনিটে পরপর দুটি ভালো সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। হুলিয়ান আলভারেসের শট রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর আকুনিয়ার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরাল শট পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। ৩২তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল তারা; আনহেল দি মারিয়ার কর্নারে বাঁক খেযে বল দূরের পোস্টে যাচ্ছিল, কর্নারের বিনিময়েই ঠেকান স্ট্যাসনি।
তিন মিনিট পর আর্জেন্টিনা শিবিরে যোগ হয় আরও বড় হতাশা। তাদের আরেকটি আক্রমণ রুখতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত মেসির মুখে আঘাত করে বসেন স্ট্যাসনি। ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টি দেয় রেফারি। কিন্তু মেসির শট অসাধারণ নৈপুণ্যে ঠেকিয়ে দেন স্ট্যাসনি।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আরও দুটি ভালো আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু আলভারেস বা রদ্রিগো দেল পল, কেউই কাজে লাগাতে পারেননি।
প্রথম ৪৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার আক্রমণের ঢেউ কতটা প্রবল ছিল, তা বোঝা যায় পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেও। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশ্যে মোট ১২টি শট নেয় তারা, যার সাতটিই লক্ষ্যে। জবাবে পোলিশরা নেয় দুটি লক্ষ্যভ্রষ্ট শট।
বিরতিতে আর্জেন্টিনার জন্য একটাই স্বস্তির খবর; অন্য ম্যাচেও স্কোরলাইন গোলশূন্য ড্র। এই অবস্থায় গ্রুপ রানার্সআপ মেসিরা।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই কাঙ্ক্ষিত গোল পেয়ে যায় তারা। এই অর্ধের ৬৮ সেকেন্ডের মাথায় নাহুয়েল মোলিনার পাস বক্সে পেয়ে আলেক্সিস মাক আলিস্তের কোনাকুনি শট দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়।
গোল খেয়ে আক্রমণের মনোযোগ দেয় পোল্যান্ড। তিন মিনিট পর সমতার সুযোগও তৈরি করে তারা। তবে কামিল গ্লিকের হেড একটুর জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।
ওদিকে সৌদি আরবের জালে দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর সাত মিনিটের মধ্যে দুবার বল পাঠায় মেক্সিকো। তাতে জমে ওঠে পয়েন্ট টেবিলের লড়াইও।
৫৬তম মিনিটে বল পায়ে ডি-বক্সে ঢুকে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি মেসি। এমন সুযোগ তৈরি করেও নষ্ট করায় তার চোখেমুখে ফুটে ওঠে হতাশা। পাঁচ মিনিট পর বক্সে দারুণ পজিশনে ফাঁকায় বল পান মাক আলিস্তের। কিন্তু বিনা বাধায় গোলরক্ষক বরাবর শট নেন ব্রাইটনের এই মিডফিল্ডার।
৬৭তম মিনিটে দারুণ এক গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আরভারেস। এনসো ফের্নান্দেসের পাস বাড়ান বক্সে। প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠাণ্ডা মাথায় প্রথম ছোঁয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের আলতো ছোঁয়ায় জায়গা বানিয়ে ডান পায়ের জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড।