বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মতিয়ার রহমানের পুত্র আ: কুদ্দুস মিলন লেখাপড়া শেষ করে চাকরির আশায় বসে না থেকে শুরু করেন কৃষি কাজ। জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন ফলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ। কিন্ত ভাগ্য যেন কোনোভাবেই সহায় হচ্ছিলো না মিলনের। বারবার লোকসান হলেও কৃষির প্রতি টান তাকে দমাতে পারেনি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মিলন সাড়ে তিন বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন কাশ্মিরি ও থাইআপেল কুলের বাগান। পুরো বাগান জুড়েই লাল-সবুজের সমারহ। লাভের আশায় মিলনের মুখে দেখা দিয়েছে হাসিক ঝিলিক।
50899984_336674653846796_1014875736680431616_n
মিলনের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোবিন্দকটি। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, এক বছর ৬ মাস আগে ভারত থেকে চারা আনেন। আনা-নেওয়াসহ প্রতিটি চারার খরচ পড়ে ৮৫-৯০ টাকা। সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে সাড়ে ৫০০ চারা লাগানো হয়। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার টাকার মতো। প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে কুল ধরেছে। এ বছর গাছ প্রতি ৬০-৮০ কেজি করে কুল হতে পারে। আগামী বছর থেকে কুলের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে বলে ধারণা করছি। এভাবে টানা ৫-৭ বছর পর্যন্ত ফল বিক্রি করা যাবে। ঢাকাতে এ কুল ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বিক্রি শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে এ বছর তিনি (৩-৪) তিন-চার লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
কাশ্মিরি কুল
তিনি আরও বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা ভালো লাগা ছিল। তাই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নেমে পড়ি কৃষি কাজে। জমি লিজ নিয়ে শুরু করি ফলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ। কিন্ত ভাগ্য যেন কোনোভাবেই সহায় হচ্ছিল না। বছর চারেক আগে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে গড়ে তুলি পেয়ারার বাগান। পেয়ারা চাষেও আমি লাভের মুখ দেখতে পারছি। আপেল কুলের চারা লাগানোর পর ওই জমিতেই ওল, ও কচুরমুখির আবাদ করেছিলাম। আড়াই লাখ টাকার মতো লাভও হয়েছে। এখন দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে কুল বাগান দেখতে। যা আমাকে আরও অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে তুলেছে।
কাশ্মিরি কুলের বাগানে সোহাগ
বেকার যুবকদের উদ্দেশে মিলন বলেন, ১ বিঘা জমিতে ১৩০-১৪০টি চারা লাগানো যায়। ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১ বিঘা জমিতে কুল বাগান করে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। কুল চাষেই ঘুরে যেতে পারে বেকার যুবকদের ভাগ্যের চাকা।
কাশ্মিরি কুলের বাগান
উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, রৌদ্রুজ্জ্বল, উচুঁ জমিতে কুল বাগান ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের আলো লাগবে সেই জমির কুল বেশি মিষ্টি হবে। ৫-৬ হাত দুরত্ব গাছের চারা রোপণ করতে হয়। তুলানামূলক রোগ-বালাইও কম। নতুনভাবে কেউ যদি কাশ্মিরি ও থাইআপেল কুলের বাগান করেন এবং পরামর্শ চাইলে তাকে অবশ্যই সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।